জুতা আমাদের প্রতিদিনের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু প্রায়শই আমরা জুতা বাছাই এবং সঠিকভাবে জুতা পড়ার ব্যাপারে নানা অবহেলা এবং ভুল করে থাকি। ভুল সাইজের জুতা পড়া, সঠিকভাবে জুতা না পড়া, ভুল উপায়ে জুতা রাখা সহ অনেক ভুলের কারণে আপনি আপনার জুতার আরামদায়ক অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন গবেষণায় প্রমান হয়েছে কেবলমাত্র সঠিক জুতাজোড়া, সঠিক ভাবে পড়লেই প্রায় ৭৫% পা ব্যথা বা এই সংক্রান্ত জটিলতা থেকে আপনি মুক্তি পেতে পারেন সহজেই। কারণ আপনার সমস্ত শরীরের প্রায় ২৫% হাড় থাকে পায়ে। তাই পায়ের সুস্থতাই আপনার সমগ্র শরীরের সুস্থতার নিশ্চয়তা দিতে পারে।
আজ আমরা জানবো জুতা পড়ার ব্যাপারে সবচেয়ে পরিচিত ১০টি ভুল এবং যেভাবে আপনি এই ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে পারেন। চলুন শুরু করা যাক।
১. ভুল সাইজের জুতা পড়া :
ভুল সাইজের জুতা পড়া সবচেয়ে পরিচিত ভুলগুলোর একটি। ভুল সাইজের জুতা বিভিন্ন সমস্যার জন্ম দিতে পারে। আপনার জুতা জোড়া যদি অতিরিক্ত আঁটসাঁট হয় , তাহলে আপনারা পায়ে ফোস্কা, জামুড়া, হ্যামার টো (পায়ের মধ্যাঙ্গুলি বেঁকে যাওয়া) সহ আরো অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার আপনার জুতা জোড়া যদি হয় অনেক বড় আকারের, তাহলে ঠিক মতো হাটতে না পারায় আপনি ইনজুরিতে পড়বার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এছাড়াও ঢিলা জুতায় বেশিক্ষন হাঁটলে পায়ের পাতা ব্যাথা হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ভুল সাইজের জুতা পড়া এড়িয়ে চলতে আপনি যে কাজটি করতে পারেন তা হচ্ছে আপনার পায়ের সঠিক পরিমাপ নিয়ে রাখা। আপনার পায়ের পাতা লম্বায়, পাশাপাশি এবং উচ্চতায় ঠিক কেমন আকারের তার সঠিক ধারণা থাকলে আপনি সহজেই সঠিক সাইজের জুতা বাছাই করতে পারবেন। এবং প্রতিবার নতুন জুতা কিনবার আগে অবশ্যই তা পড়ে দেখুন এবং নিশ্চিত হোন আপনার পায়ের মাপের জন্য সঠিক জুতাটি আপনি কিনছেন । দিন শেষে আপনার পায়ের আকার প্রায় ৪ শতাংশ বাড়তে পারে ।
২. ভুল ধরণের জুতা বাছাই:
নির্দিষ্ট কাজের জন্য তৈরী জুতা বাছাই করতে ভুল করা একটি বেশ পরিচিত ভুল। প্রত্যেক ধরণের কর্মকান্ডের জন্য আলাদা ধরনের জুতা রয়েছে। যেমন পার্টির জন্য ড্রেস শু, পাহাড়ে হাটতে আছে হাইকিং বুট , কিংবা ফুটবল বা অন্য খেলার জন্য রয়েছে এথেলেটিক শু। সঠিক উপলক্ষে সঠিক জুতা বাছাই করতে আপনি যে কাজটি করতে পারেন তা হলো জুতা সম্পর্কে আরো বেশি জানা । বিভিন্ন ধরনের জুতা কেন কখন আপনার প্রয়োজন তা জানতে আপনি অনলাইনে তথ্য খুঁজতে পারেন। ইকো এন্ড পানা’র ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করেও আপনি জানতে পারেন জুতা সম্পর্কে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য।
৩. জুতা পরিবর্তন না করা:
প্রতিদিন একই জুতা পড়তে থাকা একটি পরিচিত ভুল। আপনার কয়েক জোড়া জুতা ব্যবহারে রাখুন এবং বদলে বদলে পড়ুন জুতাগুলো। ফলে আপনার জুতা গুলো এর আসল আকারে ফিরে আসবে। ফলে জুতাগুলোর স্থায়িত্ব বেড়ে যাবে। জুতা পরিবর্তনের ফলে আপনি আরো ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন কেমন জুতা আপনার পায়ের জন্য সবচেয়ে আরামদায়ক।
৪. ক্ষয়ে যাওয়া জুতা পড়া :
অনেকেই অবহেলায় সোল্ বা তোলা ক্ষয়ে যাওয়া জুতা পরে থাকেন। এই ধরনের জুতা পড়া অনিরাপদ, কেননা এটি আপনাকে সঠিক ভাবে হাটতে বাধা দেয়। এমনকি আপনার পায়ের তলায় আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তোলা ক্ষয়ে যাওয়া জুতা ঠিকমতো ট্রাকশন না পাওয়ায় আপনি পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এর সমাধান আপনার জুতার ক্ষয়ে যাওয়া তলাটি বদলে ফেলা। একটি খুব সাধারণ তলা বা সোল্ও আপনাকে আরো ২০০-৩০০ কিলোমিটার হাঁটার মতো ব্যাকাপ দিতে পারে।
৫. নতুন জুতা পরে দীর্ঘক্ষণ হাঁটা:
অনেকেই নতুন জুতা পড়ে দীর্ঘক্ষণ হাঁটেন, ফলে পায়ে ফোস্কা পড়ে যায়। নতুন জুতার অনেক জায়গায় সেলাই বা চামড়া শক্ত-অনমনীয় অবস্থায় থাকে। মূলত সেই স্থান গুলোর ঘর্ষণেই পায়ে ফোস্কা পড়তে পারে। তাই নতুন জুতা ধীরে ধীরে ব্যবহার শুরু করতে হবে। প্রথম কিছু দিন অল্প সময়ের জন্য জুতা গুলো পড়ুন। ফলে জুতাগুলো আপনার পায়ের সাথে মানিয়ে যাবে এবং আপনার পায়ে ক্ষত তৈরী করবে না। তবুও যদি ক্ষত তৈরী হয় , ফোস্কা পড়ে তাহলে এলোভেরা জেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি দ্রুত ব্যাথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৬. লম্বা হিলের জুতা পড়া :
হিল জুতা বিশেষ করে অনেকের পছন্দের শীর্ষে আছে। তবে অতিরিক্ত উঁচু জুতা দীর্ঘদিন পড়ার ফলে কোমর এবং পিঠ ব্যাথা দেখা দিতে পারে। এই ধরনের জুতা দীর্ঘক্ষণ পড়ার ফলে গোড়ালির ব্যথা হবার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। ফ্লাট অথবা কম হিলের জুতা আপনার পায়ের জন্য আরামদায়ক এবং স্বাস্থ্যকর। তাই দীর্ঘক্ষণের জন্য হাই হিল এড়িয়ে চলা উচিত।
৭. আবহাওয়া অনুযায়ী জুতা না পড়া :
বছরের বিভিন্ন সময়ের আবহাওয়ার উপযোগী জুতা আছে। সারাবছরের তাপমাত্রা আদ্রতা একই রকম থাকে না। তাই একেক ঋতুতে একেক ধরণের জুতা বেশি উপযোগী। ঠান্ডা আবহাওয়াতে বায়ুরোধী এবং মোটা অস্ত্র যুক্ত জুতা বেশি উপযোগী অন্যদিকে গরমের দিন গুলোতে বাতাস চলাচল করে এমন জুতা বেশি আরামদায়ক। বৃষ্টির দিন গুলোতে চামড়ার জুতা এড়িয়ে টেকসই রাবার সোলের জুতা আপনার পা গুলোকে শুস্ক রাখবে।
৮. সঠিক আর্ক্ সাপোর্টের জুতা :
আর্ক্ সাপোর্ট বলতে জুতার সামনের দিক এবং হিলের মধ্যবর্তী বাঁকানো অংশকে বোঝানো হয়। এই অংশটি আপনার শরীরের ভারসাম্য এবং ওজনবহনে জুতাকে সাহায্য করে। তাই সঠিক আর্ক্ সাপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক আর্ক্ সাপোর্ট না পেলে আপনার পা মচকে যাওয়া থেকে শুরু করে নানাবিধ জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক আর্ক্ সাপোর্টের জুতা বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পায়ের আকার অনুযায়ী আর্ক্ সাপোর্ট বাছাই করুন , লক্ষ্য রাখুন যেন আপনার পায়ের তোলার সাথে জুতার সোল্ সঠিকভাবে ফিট হয়।
৯. জুতার যত্ন না নেয়া :
সঠিক যত্ন নেয়া না হলে জুতার আরামদায়কতা ও স্বাচ্ছন্ধ্য নষ্ট হতে পারে। দীর্ঘদিনের জমে থাকা ধুল বালি বা ময়লা জুতার সারফেস নষ্ট করে এবং ছিদ্র ও অসামঞ্জস্য তৈরী করে। ফলে আপনার জুতা গুলো ধীর্ঘস্থায়িত্ব হারায়। প্রতিদিন ব্যবহারের পর আপনার জুতা গুলো ঘাম শুকাবার মতো স্থানে রাখুন এবং শুকনো কাপড় ব্যবহার করে পরিষ্কার করুন। চামড়ার জুতার যত্নে লেদার কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।
১০. ভুল জায়াগায় জুতা রাখা :
জুতার দীর্ঘস্থায়িত্ব অনেকটাই নির্ভর করে জুতা কোথায় রাখা হচ্ছে তার উপর। অফিস এবং বাসায় আপনার জুতা সংরক্ষণ করুন শুষ্ক , উষ্ণ জায়গায়। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে জুতা রাখার জন্য বাক্স ব্যবহার করা । এবং কখনোই একটি জুতা আরেকটি জুতার উপর চাপিয়ে না রাখা। সারিবদ্ধভাবে পাশাপাশি রাখলে জুতা বাছাই এবং পরিষ্কার করা সহজ হবে। সঠিক জায়গায় জুতা না রাখলে জুতায় দুর্গন্ধ হতে পারে।
এই আর্টিকেলটিতে আমরা জানলাম সবচেয়ে পরিচিত ১০টি ভুল যা আমরা জুতার ব্যাপারে করে থাকি। সামান্য যত্নবান হলে সহজেই এই ভুলগুলো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। আজ এ পর্যন্তই। ক্লাসিক জুতার খোঁজখবর পেতে এবং সবসময় ক্লাসিক জুতায় নিজেকে স্মার্ট রাখতে নিয়মিত ভিসিট করুন ইকো এন্ড পানা ।